কলকাতার নাটক : কিছু আলোচনা

কলকাতায় দেখে এলাম বেশ কয়েকটি নাটক। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দের সঙ্গে দেখা করার ফাঁকে ফোকরে সময় পেলেই ছুটেছি একাডেমি, মধুসূদন বা স্টার থিয়েটার মঞ্চে। আমি নিজে নাট্যকর্মী হয়ে, অন্য নাট্যকর্মীদের কাজের সমালোচনা করতে পারব না, কারণ আমি জানি কি ভীষণ পরিশ্রম করে, নানান বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে কাজ করে তারা। আর আমার আরেকটা সমস্যা হলো, খুব কম নাটকই আমার খারাপ লাগে। কোনো একটি প্রযোজনা যখন দেখি, তখন অনেক কিছুই হয়ত চোখে পড়ে, কিন্তু সে সব কে ছাপিয়ে, ভালো লাগাটাই থেকে যায়। তাও আলোচনার খাতিরে, নাটক গুলি নিয়ে একটু কথা বার্তা চালাতে পারি – তবে সেসব যেন কখনই সমালোচনা হিসেবে না ধরা হয়ে। এসব নিতান্তই একজন প্রবাসী নাট্যকর্মীর ব্যক্তিগত অভিমত। কোনো জ্ঞানী পন্ডিতের নয়। পরের পোস্টিং গুলোয় একেকটি নাটক নিয়ে আলোচনা করব। আপনারাও আপনাদের অভিমত জানাতে দ্বিধা করবেন না।

প্রথম যে নাটকটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় রচিত “রম কম” !

নির্দেশনা: ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়।  প্রযোজনা: লোককৃষ্টি

“রম কম” দেখতে গিয়েছিলাম কোন রকম প্ল্যান না করেই। সন্ধ্যে বেলা হঠাত কিছুটা সময় পেয়ে, কাছেই মধুসূদন মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, “রম কম” নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন সেদিন। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেবশংকর  হালদার। এক নিঃসঙ্গ, অবসেসিভ কমপালসিভ লেখক (ও নাট্যকার) এবং সংসারের নির্মমতার শিকার এক বিধবা যুবতীর পরস্পরের কাছে আসার নাটক। সুতরাং “রম কম” নামটি হয়ত রোমান্টিক কমেডিকেই ইঙ্গিত করে। ছিমছাম সাদা মাটা প্রেডিক্টেবল গল্প। নাটকে দেবশংকর  দর্শকের প্রত্যাশা অনুযায়ী অভিনয় করেছেন। নাটকের শেষে নির্দেশক জানালেন, দেবশংকর এই মুহুর্তে ২২ টি নাটকে অভিনয় করছেন। ভাবা যায় না। এই নাটকে দেবশংকর  আরেকটি নতুন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন – ভেন্ত্রিলোকুইজ্ম! একটি পুতুল কুকুরের সঙ্গে দেবশংকরের কথোপকথন এই নাটকে একটু ভিন্ন স্বাদ এনে দিয়েছে নিঃসন্দেহে, যদিও এই ব্যাপারটার কতটা প্রয়োজন ছিল, তা নিয়ে তর্ক উঠতে পারে। এই নাটকে আরেকটা ঘটনাও ঘটেছে – দেবশংকর  গান গেয়েছেন, এই নাকি প্রথম। যদিও এই ব্যাপারে অনেকের দ্বিমত রয়েছে।  নায়িকার চরিত্রে (মোনালিসা?) যথাযত। তবে একটা খটকা রয়ে গেছে। কলকাতার কোনো রেস্তোরায় আমি মহিলা পরিবেশিকা (বা ওয়েট্রেস) দেখিনি। তবে আমি সব রেস্তোরায় যাইনি। আপনারা কি কেউ দেখেছেন? আর অত বড় চশমা পরার কি দরকার ছিল? শুধু চোখ নয়, মুখের অনেকটাই ঢাকা পরে গেছে ভারী ফ্রেমের আড়ালে।

মোটামুটি, অভিনয়ের গুণে, নাটকটি দেখা কালীন বেশ আনন্দ পেয়েছি। প্রযোজনায় বেশ কিছু হৃদয়গ্রাহী মুহূর্তও গড়ে উঠেছে। কিন্তু গোটা নাটকটা মনে খুব একটা দাগ কেটেছে, তা বলতে পারব না। তবে নাট্যকারের করুণ অবস্থার কথা, যা উজ্জ্বল বাবু তার প্রতাগনিস্টের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, আমি তার সঙ্গে সম্পুর্ন একমত !

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.