২০১৪ বঙ্গ সম্মেলনে সাহিত্য সভা

NABC 2014 Literary Seminar

NABC 2014 Literary Seminar

প্রতি বছরের মতো, এবছরও ধুম ধাম করে উত্তর আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো ওর্লান্ডো শহরে। আর প্রতি বছরের মত, বাংলা সংস্কৃতির নানান পসরার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যও সামান্য একটু মুখ দেখাবার সুযোগ পেয়েছিল। গান, বাজনা, নাটক ইত্যাদি অনুষ্ঠান উপলক্ষে যত খরচ হয়েছে, বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে খরচ করা হয়েছে তার এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র। তবু একেবারে যে হারিয়ে যায়নি, তার জন্য বেশ কিছু অভিবাসী সাহিত্য প্রেমিকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। এবছর, সাহিত্য সভার দায়িত্ব পরেছিল আমার উপর। বাজেট সীমিত, সুতরাং খুব ভাবনা চিন্তা করে এগোতে হয়েছিল। দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের মধ্যে থেকে আমরা পেয়েছিলাম শ্রীজাত এবং বিনায়ক বন্দোপাধ্যায়কে। বিনায়ক এসেছিলেন দুকুল পত্রিকার সৌজন্যে। দেশ পত্রিকার সম্পাদক শ্রী হর্ষ দত্ত আসবেন বলেছিলেন, কিন্তু শেষে জানালেন অনিবার্য কারণ বশতঃ তিনি আসতে পারছেন না। তবে আমি ঠিক করেছিলাম দেশের (অর্থাৎ কলকাতার) সাহিত্যিকদের সঙ্গে, আমাদের কিছু অভিবাসী সাহিত্যিককে আমন্ত্রণ জানাব, যাতে দুদিনের অনুষ্ঠান করতে কোন অসুবিধে না হয়। Continue reading

“যদিদং”

“যদিদং”
নাটক, নির্দেশনা: সোহন বন্দোপাধ্যায়
প্রযোজনা: নট-রঙ্গ

ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম স্টার থিয়েটারে জি-বাংলা নাট্য উত্সবের আয়োজন করেছে। । বাছা বাছা কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হবে সেই উত্সবে। অনুষ্ঠানসূচীতে দেখলাম সোহন বন্দোপাধ্যায়ের “যদিদং” নাটকটিও রয়েছে। “যদিদং” নাটকটি সম্পর্কে অনেক শুনেছি, পড়েছি। তাই অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে ছিল নাটকটি দেখার। সুতরাং সুযোগ ছাড়লাম না, বারাসাত থেকে গাড়ি নিয়ে যথা সময়ে পৌঁছে গেলাম ঐতিহাসিক স্টার থিয়েটারে। ভয় ছিল টিকিট পাবো কিনা, কারণ শুনেছিলাম নাটকটি খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিন্তু হলে গিয়ে দেখি সাকুল্যে জনা পঞ্চাশেক দর্শক, তার মধ্যে বেশ কিছু নিমন্ত্রিত। মাত্র চল্লিশ টাকা প্রবেশমূল্য, তাও দর্শক নেই। পরে শুনলাম এই উত্সবের যথেষ্ট প্রচার হয়নি, তাই কলকাতার বেশির ভাগ থিয়েটার প্রেমী দর্শক জানেনই না, এত সুলভে নাটক দেখার সুযোগ করে দিয়েছে জি-বাংলা।

“যদিদং” -কে হয়ত একটি আধুনিক প্রহসন বলা যেতে পারে, সুরিয়ালিস্ট কমেডিও বলা যেতে পারে। বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে যে সময়ে আমরা ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করে চলেছি, আঘাতের পর আঘাত করে তাকে ধুলিস্যাত করে ফেলতে চাইছি, ঠিক সেই সময়ে দাড়িয়েই সোহনের এই নাটক আমাদের শেখায় যে, বিবাহিত জীবন কেবল মাত্র এক আইনি বন্ধন নয়, সামাজিক রীতি নয়, আরও বেশি কিছু। এমন কিছু, যা ইচ্ছে করলেই ছিড়ে ফেলা যায় না, কোর্টের ডিক্রি অনুসারে ভাগ করা যায় না, কেটে ভাগাভাগি করা যায় না। সেই কিছু-র নাম হয়ত ভালবাসা, হয়ত সমঝোতা, হয়ত সহনশীলতা, কিম্বা হয়ত স্রেফ “মনুর মা”!

আমার এক প্রিয়জন একটা কথা বলতেন, “বিয়ের আগে যে মনোরমা, বিয়ের কিছুদিন বাদেই সে হয়ে যায় মনোর মা!” কিন্তু সেই “মনোর মা” বা “মনুর মা”-রাই যে সংসার টিকিয়ে রাখার প্রধান উপাদান, সেটা আমরা অনেক সময়েই ভুলে যাই। যদিদং নাটকের দুই চরিত্র, এক তরুণ দম্পতি (সোহন বন্দোপাধ্যায় ও মৌসুমী সেনগুপ্ত), সেই কথাটাই ভুলে গিয়েছিল। সাত বছর বিবাহিত জীবন কাটাবার পর তারা স্থির করে আর এই ভাবে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের সমস্থ স্থাবর সম্পত্তি তারা সমান দুই ভাগে ভাগ করে নেয়। চেয়ার টেবিল, আসবাব, ফ্রিজ – সমস্ত কিছুই করাত দিয়ে কেটে দু টুকরো করে ভাগ করে নেয়। ঘরের মধ্যে রেখা টেনে দুজনের জায়গা সমান করে আলাদা করে নেয়। কিন্তু তার পরেও তাদের মনে হয়, কিছু একটা রয়ে যাচ্ছে যা তারা কিছুতেই ভাগ করতে পারছে না। তাই তারা ধরে বেঁধে নিয়ে আসে এক নকল উকিল পঞ্চানন সাঁতরা-কে (দেবসঙ্কর হালদার), যিনি আবার পার্ট টাইম তান্ত্রিক-এর প্রক্সিও দিয়ে থাকেন। কিন্তু পঞ্চানন-বাবুর কাছে এর কোনো আইনি সমাধান বা তান্ত্রিক জড়ি-বুটি নেই। তার কেবল রয়েছে মনুর-মা, যে তার জন্য বিউলি ডাল আর ধনে পাতার বড়া রেঁধে অপেক্ষা করে থাকে। আর শেষ মেষ এই মনুর-মাই পারেন এই যুযুধান দম্পতিকে ফের মিলিয়ে দিতে, যদিও সেই কাজের জন্য তাকে এক বারও মঞ্চে আসতে হয় না।
আজকের আধুনিকা শিক্ষিতা নারী এই নাটক দেখে হয়ত প্রতিবাদ করতে পারেন, ঘরে বসে স্বামীর জন্য বিউলি ডাল আর ধনে পাতার বড়া রাঁধতে রাজি নাও হতে পারেন। কিন্তু এখানেই হবে ভুল, কারণ “মনুর মা” তো কোন রক্ত মাংসের মানুষ নয়, “মনুর মা” একটি abstract concept ! একটা ভাবনা, যা স্বামী স্ত্রী দুজনের মনেই বাস করে, যাকে ভাগ করা যায় না। যদিদং দেখে আমি অন্ততঃ এই টুকুই বুঝেছি। এবং আমার বোঝাটা যদি ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে বলব নাট্যকার নির্দেশক সোহন বন্দোপাধ্যায় সেই কাজে সম্পূর্ণ সার্থক। আর এই কঠিন বিষয় বস্তুকে তিনি পেশ করেছেন অসাধারণ হিউমার-এর মোড়কে।

অভিনয়ে দেবশঙ্কর আবার প্রমান করলেন, তিনি একাই একশ। প্রায় গোটা নাটক টাকে তিনিই বয়ে নিয়ে গেলেন। অবশ্য নাট্যকার তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। তুলনায় অন্য চরিত্র দুজনের প্রতি হয়ত একটু অবহেলাই করেছেন। তাদের দাম্পত্য সংকটটা খুব একটা জোরালো হয়ে প্রস্ফুটিত হলো না। কেবলই অহং বোধ, ইগো, অথবা আপোষহীনতাই কি কোনো দম্পতিকে বিচ্ছেদের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে পারে? আর কোন কারণ, কোনো অপ্রতিরোধ্য চাপ কি থাকতে পারে না? তাদের একটা গল্পও তো থাকতে পারে?

স্বল্প চরিত্রের নাটক কখনো কখনো নির্দেশককে একটু সমস্যায় ফেলে। স্টেজ কম্পোজিশনে বৈচিত্র আনা অনেক সময় কঠিন হয়ে পরে। যদিদং নাটকে চরিত্র সংখ্যা মাত্র তিন, এবং তারা সব সময় মঞ্চে থাকেন। সমস্যা আরো গভীর হয় যখন গল্পের খাতিরে তারা মঞ্চে কেবল সীমিত অঞ্চলের মধ্যে থাকতে বাধ্য হন। ফলে দীর্ঘ ১০০ মিনিটের নাটকে, মঞ্চের ছবিটা প্রায় একই থেকে যায়, যা দৃশ্যত একটু ক্লান্তিকর ঠেকে বৈকি। সংলাপ, অভিনয়, সঙ্গীত, এ সবই ব্যবহার করা হয়েছে এই বাধা কে অতিক্রম করতে, কিন্তু এতো আর শ্রুতি নাটক নয়। দর্শক তো নাটক “দেখতেই” এসেছেন। মঞ্চ নিয়ে আর একটু ভাবনা চিন্তা করার সুযোগ ছিল। যেমন, কাটা ফ্রিজ, আসবাব, ইত্যাদির ছোট ছোট ছবির মালা না করে, যদি প্রমান সাইজের কাট আউট ব্যবহার করা হত, খুব একটা মন্দ হত না। অভিনেতারা সেগুলি ব্যবহার করে মঞ্চে কিছুটা বৈচিত্র আনতে পারতেন। আর একটা কথা – আধ খানা চেয়ার কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, ঠিক যেমন ভেঙ্গে যাওয়া সংসারে একা স্বামী বা স্ত্রী জীবনের ভার বহন করতে পারে না।

নট-রঙ্গ ও সোহন কে ধন্যবাদ একটি ভালো প্রযোজনা উপহার দেবার জন্য। পরবর্তী প্রযোজনা “মন মানুষের” জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করে রইলাম।

ব্রাত্য বসুর নাটক : সিনেমার মতো

“সিনেমার মতো”

নাটক, নির্দেশনা: ব্রাত্য বসু

প্রযোজনা: কালিন্দী ব্রাত্যজন

দুপুরে ব্রিগেডে তৃণমূলের জনসভা। বিকেলে মধুসূদন মঞ্চে “সিনেমার মতো”! এই ভাবেই আজকের দিনের অন্যতম নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু তার রাজনৈতিক-প্রশাসনিক  দায়িত্বর সঙ্গে সঙ্গে নাট্য চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন।  আমি অবশ্য ব্রিগেডের পথ মাড়াই নি, মধুসূদন মঞ্চেই পৌছে গিয়েছিলাম সময়মত। ঢাকুরিয়া ক্রিকেট ক্লাবের আমন্ত্রিত শো ছিল সেদিন। প্রাথমিক কিছু বক্তৃতা, পুষ্প স্তবক, সম্মাননা জ্ঞাপন ইত্যাদি অনুষ্ঠানের পর শুরু হল নাটক।

অল্প কোথায় বলতে  গেলে, “সিনেমার মতো” একটি ঝকঝকে স্মার্ট প্রযোজনা। বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের উত্থান  পতনের ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে  একটি পরিবার ও তার সদস্যদের ভাঙা গড়ার কাহিনী এই নাটক। নাটকের মাধ্যমে বাংলা সিনেমাকে ধরা, এবং তারই মধ্যে মানবিক সম্পর্কের টানা পোড়েনের এই মেলবন্ধন, এটা একটা নতুন ব্যাপার বটেই। আর  নাট্যকার ব্রাত্য অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে বুনেছেন এই দুই কাহিনী।  বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের এক নায়িকা (অনুসূয়া), যার গুণমুগ্ধ বর্তমান স্বামী (পীযুষ) তার স্ত্রীর জীবন নিয়ে এক ডকুমেন্টারি তৈরিতে ব্যস্ত,  ছোট ছেলে স্বপ্ন দেখে নতুন যুগের সিনেমা তৈরী করার, আর  মদ্যপ জ্যেষ্ঠ পুত্র তার শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি আর এক মিথ্যেকে  আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যায়।  নাটক দেখতে দেখতে অনিবার্য ভাবে মনে পড়ে যায় আর্থার মিলারের “ডেথ অফ এ সেল্স ম্যান” এর কথা – দুই ভাই, এবং তাদের পিতা –  কৌলিন্যের অহংকার, আশা-প্রত্যাশা, স্বপ্ন – দুঃস্বপ্ন, অনাচার-ব্যভিচার, বিশ্বাস-বিশ্বাসহীনতা,  সাফল্য-ব্যর্থতার গল্প। কিন্তু এ নাটক “ডেথ অফ এ সেল্স ম্যান” নয়, কারণ এখানে পিতা পুত্রের ব্যর্থতায়  নিজেকে শেষ করেন না।  এই নাটকে  পুত্র  পিতার ব্যর্থতার গ্লানি সহ্য করতে পারে না।   তাই উইলি লোম্যানের মতই নিজেকে শেষ করে ফেলতে বাধ্য হয়।  প্রধানত চরিত্রগুলির স্মৃতিচারণার মাধমেই নাট্যকার গল্প বলেন, সুতরাং এই নাটককে এক  হিসেবে  “মেমরি প্লে” হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। কিন্তু এই স্মৃতি চারণা যখন বাংলা সিনেমার ইতিহাস বিবৃত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখন তা  ক্লান্তিকর ঠেকে  বৈকি। থিয়েটার দেখতে এসে  দর্শক সিনেমার ইতিহাসের ক্লাসে ছাত্র হয়ে বসে থাকতে রাজি নাও হতে পারেন। এই বক্তৃতা গুলি যদি একটু সংক্ষিপ্ত করা যেত, তাহলে নাটকের সময় কিছুটা কমত, আরো আঁটসাঁট হত প্রযোজনা।

অভিনয় সকলেরই বেশ  ভালো। অনুসূয়া, পীযুষ দক্ষ্য অভিনেতা এবং এই নাটকেও তার প্রমান রেখেছেন তারা। পৌলমী তার চরিত্রে যথাযত, বিশেষ কিছু তার করারও  ছিল না।   মুখ্য চরিত্রে ব্রাত্য বসুর অভিনয় বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এক ফাঁকে একটু মশকরাও করেছেন ব্রাত্য।  মুম্বাই ফেরত বড় ভাই যখন ছোট ভাইকে বলে, “এই ভাই, তুই কি আজকাল তৃনমূল করছিস নাকি ভাই?” তখন দর্শক না হেসে পারেন না।

দৃশ্যান্তরে জনপ্রিয় বাংলা সিনেমার গানের দৃশ্যের প্রক্ষেপণ একটু ভিন্ন স্বাদ উপহার দেয় ঠিকই , কিন্তু  তা মূল নাটককে কোনো ভাবে ঋদ্ধ করে বলে আমার মনে হয় না। মঞ্চ পরিকল্পনায় যথেষ্ঠ মুন্সিয়ানার পরিচয় রয়েছে। কিন্তু মধুসূদন মঞ্চের বৃহত পরিসরে, তা একটু ছোট বলেই মনে হয়েছে।  প্রচুর স্পেস আসে পাশে নষ্ট হয়েছে, যা ছোট মঞ্চে হয়ত মনে হবে না।

পরিশেষে বলব, ব্রাত্য যে তার  রাজনৈতিক জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও থিয়েটার করে চলেছেন, তার জন্য তাকে ধন্যবাদ ও  অভিনন্দন।

কলকাতার নাটক : কিছু আলোচনা

কলকাতায় দেখে এলাম বেশ কয়েকটি নাটক। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব দের সঙ্গে দেখা করার ফাঁকে ফোকরে সময় পেলেই ছুটেছি একাডেমি, মধুসূদন বা স্টার থিয়েটার মঞ্চে। আমি নিজে নাট্যকর্মী হয়ে, অন্য নাট্যকর্মীদের কাজের সমালোচনা করতে পারব না, কারণ আমি জানি কি ভীষণ পরিশ্রম করে, নানান বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে কাজ করে তারা। আর আমার আরেকটা সমস্যা হলো, খুব কম নাটকই আমার খারাপ লাগে। কোনো একটি প্রযোজনা যখন দেখি, তখন অনেক কিছুই হয়ত চোখে পড়ে, কিন্তু সে সব কে ছাপিয়ে, ভালো লাগাটাই থেকে যায়। তাও আলোচনার খাতিরে, নাটক গুলি নিয়ে একটু কথা বার্তা চালাতে পারি – তবে সেসব যেন কখনই সমালোচনা হিসেবে না ধরা হয়ে। এসব নিতান্তই একজন প্রবাসী নাট্যকর্মীর ব্যক্তিগত অভিমত। কোনো জ্ঞানী পন্ডিতের নয়। পরের পোস্টিং গুলোয় একেকটি নাটক নিয়ে আলোচনা করব। আপনারাও আপনাদের অভিমত জানাতে দ্বিধা করবেন না।

প্রথম যে নাটকটি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হল উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় রচিত “রম কম” !

নির্দেশনা: ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়।  প্রযোজনা: লোককৃষ্টি

“রম কম” দেখতে গিয়েছিলাম কোন রকম প্ল্যান না করেই। সন্ধ্যে বেলা হঠাত কিছুটা সময় পেয়ে, কাছেই মধুসূদন মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, “রম কম” নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন সেদিন। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেবশংকর  হালদার। এক নিঃসঙ্গ, অবসেসিভ কমপালসিভ লেখক (ও নাট্যকার) এবং সংসারের নির্মমতার শিকার এক বিধবা যুবতীর পরস্পরের কাছে আসার নাটক। সুতরাং “রম কম” নামটি হয়ত রোমান্টিক কমেডিকেই ইঙ্গিত করে। ছিমছাম সাদা মাটা প্রেডিক্টেবল গল্প। নাটকে দেবশংকর  দর্শকের প্রত্যাশা অনুযায়ী অভিনয় করেছেন। নাটকের শেষে নির্দেশক জানালেন, দেবশংকর এই মুহুর্তে ২২ টি নাটকে অভিনয় করছেন। ভাবা যায় না। এই নাটকে দেবশংকর  আরেকটি নতুন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন – ভেন্ত্রিলোকুইজ্ম! একটি পুতুল কুকুরের সঙ্গে দেবশংকরের কথোপকথন এই নাটকে একটু ভিন্ন স্বাদ এনে দিয়েছে নিঃসন্দেহে, যদিও এই ব্যাপারটার কতটা প্রয়োজন ছিল, তা নিয়ে তর্ক উঠতে পারে। এই নাটকে আরেকটা ঘটনাও ঘটেছে – দেবশংকর  গান গেয়েছেন, এই নাকি প্রথম। যদিও এই ব্যাপারে অনেকের দ্বিমত রয়েছে।  নায়িকার চরিত্রে (মোনালিসা?) যথাযত। তবে একটা খটকা রয়ে গেছে। কলকাতার কোনো রেস্তোরায় আমি মহিলা পরিবেশিকা (বা ওয়েট্রেস) দেখিনি। তবে আমি সব রেস্তোরায় যাইনি। আপনারা কি কেউ দেখেছেন? আর অত বড় চশমা পরার কি দরকার ছিল? শুধু চোখ নয়, মুখের অনেকটাই ঢাকা পরে গেছে ভারী ফ্রেমের আড়ালে।

মোটামুটি, অভিনয়ের গুণে, নাটকটি দেখা কালীন বেশ আনন্দ পেয়েছি। প্রযোজনায় বেশ কিছু হৃদয়গ্রাহী মুহূর্তও গড়ে উঠেছে। কিন্তু গোটা নাটকটা মনে খুব একটা দাগ কেটেছে, তা বলতে পারব না। তবে নাট্যকারের করুণ অবস্থার কথা, যা উজ্জ্বল বাবু তার প্রতাগনিস্টের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, আমি তার সঙ্গে সম্পুর্ন একমত !

 

 

এবার পুজোয়

Durga

Durga

দেখতে দেখতে পুজো এসে  গেল। গত সপ্তাহে মহালয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই পুজোর তোরজোর। নিউজার্সি তে আজকাল বেশ কয়েকটি মহালয়ার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আনন্দমন্দিরের মহিষাসুর মর্দিনী গীতি আলেখ্য, এবং ভারত সেবাশ্রম এ অনুষ্ঠিত দেবী আবাহন। আনন্দ মন্দিরএর অনুষ্ঠানের এবছর দশ বছর পূর্তি হলো।  প্রতি বছরের মত, এবারেরও অরুণ ভৌমিকের পরিচালনায় জড়ো হয়েছিলেন  নিউ জার্সির বেশ কিছু প্রথিতযশা শিল্পী। সেই সঙ্গে, রবিবারের  ভোর  রাত্রে বিছানা ছেড়ে, সেজে গুজে মন্দিরে এসে হাজীর  হয়েছিলেন প্রায় শ দুয়েক শ্রোতা। তার আগের ভোরে, সেই শিল্পী এবং শ্রোতাদের অনেকেই হাজীর ছিলেন ভারত সেবাশ্রমে। নিতান্ত প্রানের টান না থাকলে, এরকম পর পর দুই রাত্রি জেগে দেবীকে আবাহন জানাতে খুব বেশি লোক উত্সাহিত হবেন না। আসলে বাণী কুমার, পঙ্কজ মল্লিক , বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুর মর্দিনীর সুর না শুনলে অনেক বাঙালির মনেই পুজো পুজো ভাব আসে না।  তাই নিউজার্সির আকাশে বাতাসে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জি। আগামী কাল থেকে পুজো।

কিন্তু এবার পুজোয় কি করব, সেটা ভাবতে গিয়েই একটু খটকা লাগলো। গান বাজনা শুনব, নাটক নাচ দেখব, বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দেব, খাওয়া দাওয়া করব, সবই ঠিক আছে! কিন্তু এসব তো  প্রতি বছরই করে আসছি। এবার কি অন্য কিছু করা যায় না? পুজো মন্ডপের কোন একটা কোনে বা ঘরে বসে, সাহিত্য পাঠ, সাহিত্য চর্চা করলে কেমন হয়? পুজো সংখ্যা থেকে কোন গল্প পড়া হল, কিম্বা কবিতা পাঠ করা হল – কেমন হবে তাহলে ব্যাপারটা?  সবাইকে আসতে হবে  এমন কোন কথা নেই। কিম্বা,  কয়েকটা তাসের টেবিল পেতে দিলে কেমন হয়? একটা ক্যারাম বোর্ড?  দাবা বোর্ড থাকলেও ক্ষতি নেই।  একটা অঘোষিত ফ্যাশন শো হয়ে যাক না? সবাই তো সেজে গুজেই আসবেন, কিন্তু কিছু গুপ্ত বিচারক মিলে যদি কোন সুন্দরীকে পুজোর সেরা বলে ঘোষণা করেন, তাহলে কেমন হয়? অন্যেরা কি খুব রাগ করবেন?  পুজো মন্ডপ থেকে নিশ্চিত ভাবে অসংখ্য পোস্টিং হবে ফেস বুকে, টুইটারে! প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় কিছু বাছাই পোস্ট দেখালে কেমন হয়? কেবল #njpujo ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

এখন আমি তো অনেক কিছুই বললাম, এবার আপনারা কিছু বলুন? আপনারা পুজোয় এবার কি করতে চান? মতামত শোনার অপেক্ষায় রইলাম।

অষ্টম দক্ষিন এশীয় নাট্য উত্সব

Palok

Palok at the South Asian Theatre Festival

এপিক একটার্স ওয়ার্কশপের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে  আগামী ২৭, ২৮ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩, নিউব্রান্সুইক  নিউজার্সির ক্রসরোডস  থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হবে অষ্টম দক্ষিন এশীয় নাট্য উত্সব। তিন দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ হবে সাতটি নাটক। থাকবে গার্গী মুখোপাধ্যায় রচিত ও পরিচালিত  আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের অভিনীত নাটক ““আওয়ার ভয়েসেস”, মোহন আগাশে নির্দেশিত হিন্দি নাটক “নেভার মাইন্ড”, সুদীপ্ত ভৌমিক রচিত নির্দেশিত বাংলা নাটক “পালক”, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় অভিনীত “নানা রঙের দিন”, গিরিশ কারনাড রচিত ফারলি রিচমন্ড পরিচালিত “হয়বদন”, চন্দন সেন রচিত মেঘনাদ ভট্টাচার্য নির্দেশিত “দুই হুজুরের গপ্পো”! এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবে এপিকের ২৫ বছরের এই যাত্রা পথের উপর অলকেশ দত্তরায় রচিত ও ইন্দ্রনীল মুখোপাধ্যায় নির্দেশিত  একটি নাট্যালেখ্য ।    থাকবে নাট্যালোচনা, যাতে অংশগ্রহন করবেন দেশ বিদেশের বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব । এছাড়া থাকবে ধৃতি বাগচী পরিকল্পিত এপিকের ২৫ বছরের ইতিহাসের উপর একটি মনোজ্ঞ  প্রদর্শনী।   Continue reading

শেষ পর্যন্ত!

অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম, ব্লগে এবার  বাংলাতেও লেখার ব্যবস্থা করলে কেমন হয়? এই ব্লগ যখন শুরু করি, তখন কম্পিউটারে  বাংলায় লেখার কোন সুব্যবস্থা ছিল না! সৌভাগ্য, এখন আর সেই সমস্যা নেই! গুগল ইনপুট এখন বাংলায় লেখার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া রয়েছে অভ্র। ইউনিকোডের দৌলতে বাংলা ফন্ট এখন সব কম্পিউটারেই দেখা সম্ভব।  কিছু কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে, তবে সেগুলি হয়ত অতিক্রম করা যায়।  এই ব্লগের জন্য আমি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে থাকি। তবে আমি বাংলা ইংরেজি একই পাতায় রাখতে দ্বিধা করেছি।  অন্য কোন কারণে নয়, আমার মনে হয়েছে ব্যাপারটা একটু দৃষ্টিকটু হবে।  বাংলায় আলাদা বিভাগ তৈরী করতে একটু কাঠখড় পোড়াতে হল।  সমাধানটা যদিও আমার সম্পূর্ণ পছন্দসই নয়, তবে এটা চলতে পারে। বাংলা ব্লগ পড়তে হলে, পাঠক-কে  “Bengali”  মেনু টিকে ক্লিক করতে হবে। অর্থাৎ, বাংলা থাকবেন আড়ালে। তা থাকুন,  আগ্রহী পাঠক নিশ্চই খুঁজে নেবেন তার পছন্দের ভাষাকে। সুতরাং, এই ব্লগের পাতায় চোখ রাখুন।  হয়ত অনেক ছাই ভস্ম ঘাঁটতে হবে, কিন্তু কে জানে, দু একটা অমূল্য রতন পেলেও পেতে পারেন।